কালকে আমাবস্যার রাত কাল হবে আলিয়া পরীর শেষ রাত। এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
আবদুল্লাহ হুজুরের কথায় আমরা সবাই যেনো নতুন করে একটা আশার আলো দেখতে পেলাম।
ওনার কথা শুনে বাবা বললেন, বাবা তোমার কথা যেনো সত্যি হয়। এই আলিয়া পরীর অভিশাপ আমার ছেলের উপর পড়ার পর থেকে কেউ শান্তিতে নেই৷ ওকে একবার বন্ধি করছিলো এক তান্তিক কিন্তু আঁটকে রাখতে পারেনি দুই তিন বছর পর আবারো ফিরে আসছে।
বাবার কথায় হুজুর বলেন, এবার আর পারবেনা৷ আলিয়া পরী সুধু মানুষ না অনেক জ্বীনদের শ*ত্রু, আমার সাথে যে আমার ওস্তাদ জ্বীন আছে এনার প্রচুর ক্ষমতা, ওনিও আলিয়া পরীর উপর রেগে আছেন কেননা ওনার গোত্রের অনেক জ্বীনকে বিনা কারণে মেরে*ছে ঐ আলিয়া পরী। আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। কালকে রাতে হবে আসল খেলা, আমি আজকে চলে যাচ্ছি, আমি এখানে আসছি এটা আলিয়া পরী এতক্ষনে বুঝে গেছে, ও লড়াই করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নিশ্চয়ই। আজ রাতে আশা করি কোন সমস্যা হবেনা। আলিয়া পরী আজকে আসবেনা৷ কাল রাতে আসবে। আমি কালকে রাত হবার আগে সন্ধার দিকে আপনাদের বাড়িতে আসবো।
কথাটা বলে ওনি চলে গেলেন। ওনি চলে যাবার পর মা বাবা বলতে লাগলেন, আল্লাহ রহম করো৷ আলিয়া পরীর হাত থেকে বাঁচাও আমার ছেলেকে৷
আবদুল্লাহ হুজুর চলে যাবার পর সেদিনটা ভালোই ভালোই কেটে যায়, রাতেও আর তেমন কোন সমস্যা হয়না।
পরেরদিন পড়তেই থাকতে হয় ভয়ে৷ আজ রাতে কি হয় কি হয়৷ খুব একটা টেনশন আর ভয় কাজ করছে, এদিকে আমার শরীল তো খুবি খারাপ, আমিযে ঠিকমত উঠে দাঁড়াবো সেটাও পারছিনা, শরীল শুকিয়ে কংকালের মত হয়ে গেছে।
ভয়ে ভয়ে সময় যেতে লাগলো। আর অবশেষে চলে আসলো সন্ধা। সন্ধা হতেই সেই হুজুর আসলো আমাদের বাড়িতে হুজুর এসে আমাকে বললো নিশাদ উঠো, তোমাকে আমার সাথে বাহিরে যেতে হবে, আলিয়া পরীর মোকাবেলা করতে হবে বাহিরে কোথাও বাড়িতে করলে সমস্যা আছে।
হুজুরের কথায় বাবা বললেন, আমিও যাই তাহলে।
তখন হুজুর বললেন, না আপনি গেলে হবেনা। আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, আমি একটু পর আবার ওকে নিয়ে চলে আসবো।
কথাটা বলে হুজুর আমাকে ধরাধরি করে বাহিরে নিয়ে গেলেন।
এদিকে হুজুর আমাকে নিয়ে বাহিরে যাবার কিছুক্ষন পর আবারো হুজুর বাড়িতে আসলেন।
হুজুর একা বাড়িতে আসায় বাবা বললেন কিহ ব্যাপার বাবা তুমি একা নিশাদ কোথায়।
বাবার কথায় হুজুর বললেন, নিশাদ মানে, নিশাদতো আপনাদের কাছে কোথায় ও।
হুজুরের কথায় বাবা মা জান্নাত সবাই বুঝতে পারলেন আমার সাথে খারাপ কিছু হইছে নিশ্চয়ই আলিয়া পরী হুজুরের রুপ নিয়ে আমাকে নিয়ে চলে গেছে। 😢
হুজুরের কথায় বাবা বললেন, হুজুর সর্বনাশ হয়ে গেছে, একটু আগে আপনার রুপ নিয়ে একজন এসে নিশাদকে নিয়ে চলে গেছে, আমাদের ধোঁকা দিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে।
কথাটা বলে সবাই কান্না করতে লাগলেন। এদিকে আবদুল্লাহ হুজুর তখন বললেন, আপনারা কান্না করবেন না শান্ত হন। নিশাদকে আলিয়া পরী নিয়ে গেছে আমি জানি, এটা আমারি প্লান বলতে পারেন, আমি ইচ্ছে করে আপনাদের বাড়িতে দেরি করে আসছি যেনো আলিয়া পরী নিশাদকে নিয়ে যায়, আলিয়া পরী এখনো নিশাদের কিছু করতে পারবেনা। আপনারা আমার উপর ভরসা রাখেন, আল্লাহর রহমতে আমি নিশাদকে নিয়েই ফিরে আসবো। আপনারা বাড়ি থেকে কোথাও জাবেন না। আল্লাহকে ডাকুন আল্লাহ চাইলে আলিয়া পরী আপনার ছেলের কিছু করতে পারবেনা। আমার জন্য দোয়া করবেন।
কথাটা বলে বাড়ি থেকে বের হলেন হুজুর।
এদিকে আলিয়া পরী আমাকে নিয়ে এসে রেখেন এক গহীন জঙ্গল, সেখানে বড় বড় গাছ ছাড়া কিছু নেই, মাটিতে একটা গোল বৃত্ত এঁকে সেখানে শুয়ে রাখছে আমাকে, আমি সেখানে শুয়ে আছি নড়াচড়া করতে পারছিনা, আমার চারিদিকে ঘিরে আছে শত শত জ্বীন, সবাই যেনো আমার মৃ*ত্যুর অপেক্ষা করছে।
এমন অবস্থায় আলিয়া পরী আমার বুকের কাছে এসে তাঁর ধারালো নখ আমার বুকে ঢুকিয়ে দিতে সেখান থেকে র*ক্ত পড়তে লাগলো, আর সেই র*ক্ত আলিয়া পরী তার জিহ্বা দিয়ে চেঁটে খেতে খেতে বললো, আর মাত্র কিছুক্ষন, কিছুক্ষন পর তোর সব র*ক্ত খেয়ে ফেলবো, আর তোকে বলি দিবো আমার প্রভুর নামে, কথাটা বলে বিকট শব্দে হাঁসতে লাগলেন পরী।
পরীর হাসিতে কেঁপে উঠছিলো চারিদিক, এমন অবস্থায় সেখানে চলে আসলেন, আবদুল্লাহ হুজুর ও তাঁর সাথে থাকা জ্বীন, আমি তখনি প্রথম হুজুর সাথে থাকা জ্বীনটাকে দেখেছি, ওনি বেশ উচা লম্বা, দেখে মনে হচ্ছে অনেক শক্তিশালী, ওনার হাতে একটা তরবারি।
হুজুর সেখানে আসায় আলিয়া পরী রেগে হুজুরকে বললেন, আদম সন্তান তুই আমার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবিনা, আজ তোকে সহ তোর চামচাকেও ম*রতে হবে আমার হাতে।
কথাটা বলে আলিয়া পরী, হাত দিয়ে ইশারা করতেই তাঁর অনুসারী পিচাশ জ্বীনেরা ধেঁয়ে আসতে শুরু করলো হুজুরের দিকে, ঠিক তখনি হুজুরের ওস্তাদ জ্বীন মহূর্তের মধ্যে আলিয়া পরীর অনুসারী অনেক জ্বীনকে মে*রে ফেললেন।
ওনি অনেক জ্বীনকে মা*রায়, আলিয়া পরীর অনুসারী সেখানে থাকা জ্বীন গুলো ভয়ে আর সামনের দিকে এগোতে সাহস পাচ্ছিলেন না।
এদিকে তখনি আলিয়া পরী রেগে হুজুরের সাথে থাকা জ্বীনটার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। শুরু হলো দুজনের মধ্যে যুদ্ধ, ওদের যুদ্ধে সেই জ্বীন আলিয়া পরীকে আঘাত করতে লাগলেন, এভাবে বেশ কিছুক্ষন ওদের যুদ্ধ চলার পর সেই জ্বীনটা আলিয়া পরীকে জোরে একটা আঘাত করায় আলিয়া পরী ছিঁটকে গিয়ে পড়লেন দূরে কোথাও।
দূরে ছিঁটকে পড়ায়, আলিয়া পরী বুঝতে পারলেন সে যতই শক্তিশালী হোক এই জ্বীনের সাথে সে পারবেনা, এই ভেবে আলিয়া পরী ওর সামনে একটা গোল বৃত্ত একে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে কি জানি পড়তে লাগলেন আর হাত তালি দিতে লাগলেন।
এভাবে কিছুক্ষন চলার পর হঠাৎ আশপাশের পরিবেশটা পাল্টে গেলো আর সেখানে এসে হাজির হলো বিশাল সাপ, এত বড় সাপ কিভাবে সম্ভব, সাধারণ কোন মানুষ এত বড় সাপ দেখলেই বেহুশ হয়ে যাবে, সেই সাপের চোখ গুলো আগুনের মত জলজল করছে।
সেই সাপটা ওখানে এসে তাঁর রুপ পরিবর্তন করলেন, ওনি রুপ পরিবর্তন করতেই বুঝতে পারলাম ওনি একটা জ্বীন, ওনাকে দেখে অনেক ভয় লাগছে, ওনি আসায় আলিয়া পরী হাঁসতে হাঁসতে বললেন, এসে গেছে এসে গেছে আমার মালিক, মালিক আপনাকে সরণ করার জন্য দুঃখীত কিন্তু আপনাকে এখন না ডাকলে আপনার এই অনুসারীকে মরতে হতো।
ঐ যে ও আমাকে অনেক আঘাত করছে, আপনি ওর বিচার করুন।
আলিয়া পরীর কথায় ওর মালিক জ্বীন, হুজুরের জ্বীনটার দিকে এগিয়ে আসলেন, আবারো শুরু হলো দুই জ্বীনের লড়াই, এই লড়াইয়ে আলিয়া পরীর মালিক জ্বীন ও আলিয়া পরী দুজনে মিলে হুজুরের ওস্তাদ জ্বীনকে আঘাত করতে লাগলেন, সুধু ওনাকে না হুজুরকেও আঘাত করতে লাগলেন।
আলিয়া পরী ও তাঁর মালিক জ্বীনের আঘাতে হুজুর আর হুজুরের ওস্তাদ জ্বীন লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। এই বুঝি তাঁদের মৃ*ত্যু হবে।
এমন অবস্থায় আলিয়া পরী ও তাঁর মালিক জ্বীন হুজুরের দিকে এগিয়ে আসতেই৷ হুজুর আল্লাহর নাম নিয়ে সেই ফুলটার জমজম পানিতে চুবিয়ে আলিয়া পরী ও তাঁর মালিক জ্বীনের উপর ছিটিয়ে দিলেন।
আপনারা হয়তো ভাবছেন কোন ফুল, এটা সেই ফুল যেটা জ্বীন রাজ্যে আকাশমনি পাহাড়ে পাওয়া যায়, যেটা জান্নাত একবার নিয়ে আসছিলো।
আসলে জ্বীনের বাদশা পরে বুঝতে পারেন, আমি অনেক অসুস্থ আলিয়া পরী আমাকে মেরে ফেলবেন, তাই জ্বীনের বাদশা জান্নাতকে আবারো আরেকটা ফুল এনে দিয়ে গিয়েছিলো৷ সেই ফুলটা জান্নাত এই হুজুরকে দিয়ে দেয়, যেটা আলিয়া জানতোনা।
তো হুজুর সেই ফুলের পানি আলিয়া পরী ও তাঁর মালিক জ্বীনের শরীলে ছিঁটিয়ে দেয়ায়৷ ওরা চিৎ*কার করে ছটপট করতে থাকে, আর অনেক দূর্বল হয়ে যায়, এই সুযোগে হুজুরের ওস্তাদ জ্বীন আলিয়া পরী ও তাঁর মালিক জ্বীনকে তাঁর তরবারীর আঘাতে মে*রে ফেলে।
আলিয়া পরী ও তাঁর মালিক জ্বীনকে মে*রে ফেলায়, আলিয়া পরীর অনুসারী সকল জ্বীন সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
আলিয়া পরী মা*রা যাওয়ায়, হুজুর শান্তির নিশ্বাস ফেলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, আমি সেখানেই শুয়ে ছিলাম পরে হুজুর আমাকে সেখান থেকে নিয়ে বাড়িতে আসেন।
বাড়িতে মা বাবা জান্নাত সবাই নামায পড়ে আমার জন্য দোয়া করছে আর কান্না করছে, আমি ফিরে আসায় সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন।
মৃ*ত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসায় সবার মাঝে যেনো আনন্দের কান্না। আমাকে নিয়ে আসায় বাবা হুজুরকে জড়িয়ে ধরে আর বলে, তোমার এই উপকার আমি কিভাবে দিবো বাবা, বলো তোমার কি চাই।
বাবার কথায় হুজুর বলেন আমার কিছু চাইনা, আমার জন্য দোয়া করবেন৷ আর সব সময় সত পথে থাকবেন।
কথাটা বলে চলে যায় সেই হুজুর।
হুজুর চলে যাবার পর আমি বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হই। এরপর থেকে আমার সাথে আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হয়নি।
আলিয়া পরীর মৃ*ত্যু*র মধ্যে দিয়ে শেষ হলো পরীর সাথে সহবাস গল্পটি।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেননি আজ গল্পটা শেষ হবে। এটা অনেকের পছন্দের একটা গল্প ছিলো। গল্পটায় শেষ হওয়ায় তাঁদের মন খারাপ হইছে৷ আমি আপনাদের বলবো মন খারাপ করবেন না৷ আমি নতুন গল্প লিখবো তাই এটা শেষ করলাম।
গল্পটা আপনাদের কেমন লেগেছে সেটা জানাবেন কমেন্ট করে।
তো দেখা হচ্ছে নতুন কোন গল্পে। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন। আছসালামু আলাইকুম।
লেখক মোঃ নিশাদ সমাপ্ত সমাপ্ত সমাপ্ত