সারা বাড়িতে কেউ নেই আমি আর ছোট সাহেব ছাড়া।

 

বাড়ির সবাই বাইরে গেছে।

বড় সাহেব তো সে তার স্ত্রী কে নিয়ে ঘুরতে দেখে।মালিক আর মালকিন তো গ্রামের বাড়ি গেছে বেড়াতে।

আমাকেও সাথে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ছোট সাহেব যেতে চাননি তো তাই আমাকে রেখে চলে গেছেন।

ছোট সাহেবের খেয়াল রাখার জন্য।

বিকাল পাঁচটা বেজে গেছে।

ইস ছোট সাহেব তো এখন কফি খাবেন।

যাই তাড়াতাড়ি করে কফিটা বানায়।

তাহলে আজকে আর আমার রক্ষে নেই।

আমি তাড়াতাড়ি করে কফি বানাতে চলে গেলাম।

গ্যাস অন করতে যেয়ে একটু আ"গুনের ছোঁয়া আমার হাতে লেগে গেছে।

তেমন কিছুই হয়নি।

আমি কফিটা বানিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ছোট সাহেবের ঘরে ঢুকলাম।

উনার ঘরেই ঢুকে দেখি উনি ল্যাপটপে কার সাথে যেন কথা বলছেন।

.

আমাকে দেখার পর পরই ছোট সাহেব ল্যাপটপ টা অফ করে দিলেন।

উনি আমাকে দেখে চরম পর্যায়ে রেগে গেছেন।

রাগি গলা নিয়ে আমায় বলতে লাগলেন,,

.

-- তুই এইখানে কি করছিস?

আমার ঘরে কেন এসেছিস?

.

-- আপনি তো এইসময় কফি খান তাই কফি নিয়ে এসেছি।

.

-- কফি নিয়ে এসেছিস ভালো কথা আমার ঘরে যে ঢুকলি দরজায় তো একবার নকও করতে পারি।

তা না করে সরাসরি আমার ঘরে ঢুকে গেলি।

.

-- মাফ করবেন ছোট সাহেব আমি বুঝতে পারি নি।

এরপর থেকে আমি দরজায় টোকা দিয়েই আপনার অনুমতি নিয়ে আপনার ঘরে আসব।

.

তিনি বিছানা থেকে উঠে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরলেন।

আমার খুব ব্য"থা করছে।

এমনভাবে উনি আমার হাত ধরেছেন যে কফিতো প্রায়ই পড়েই যাচ্ছিল।

.

-- বুঝতে পারিনি বললেই হল।

ফা*জিল মেয়ে একটা।

তোকে কতবার বলেছি আমার সামনে আসবি না তুই।

.

ছোট সাহেব আমার হাতটা মোচর দিয়ে ওইদিকে ঘুরিয়ে নিল।

আমার হাতটা এখন আরও ব্য"থা করছে।

আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

.

এইবার উনি বলতে লাগলেন,,

.

-- তুই তো আমার কথায় শুনিস না।

তাও বেহায়ার মত আমার সামনে চলে আছিস।

তুই কি বুঝতে পারিছ না আমি তোকে সহ্য করতে পারি না।

আজকের পর থেকে তুই আমার সামনে আসবি না।

.

-- হ্যা আসব না।

.

আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে উনি কফি মগটা হাতে নিলেন।

কফিতে একটু চুমুক দিয়েই বলে উঠলেন,,

.

-- এইটা কি কফি নিয়ে এসেছিস।

একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে।

.

-- কি বলছেন ছোট সাহেব।

আমি তো এই মাত্র বানিয়ে নিয়ে আসলাম।

এত তাড়াতাড়ি কি করে ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে।

.

-- তাহলে তুই নিজেই দ্যাখ কতখানি ঠান্ডা হয়ে গেছে।

.

এই কথা বলার সাথে সাথে উনি আমার দুই‌ হাতে গরম কফি ফেলে দিলেন।

হাতটা জ্ব'লে যাচ্ছে আমার।

.

-- এইবার বুঝতে পারলি তো কত ঠান্ডা হয়ে গেছে।

যা বের হ আমার ঘর থেকে।

.

আমি চলে যাচ্ছিলাম উনার ঘর থেকে উনি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলতে লাগলেন,,,,

.

-- এই শোন।

.

-- জ্বি ছোট সাহেব।

.

-- আজকে রাতে আমার জন্য রান্না করার দরকার নেই।

ফ্রেন্ডসরা আসবে ওরা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসবে।

.

-- ঠিক আছে।

.

.

.

আমি উনার ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম।

আস্তে আস্তে করে নিজের রুমে বসে পড়লাম।

আমি কান্না করতে লাগলাম।

.

হাতে ফু দিতে লাগলাম।

হাতে একদম ফোসকা পড়ে গেছে।

এই জ্বা'লা আর সহ্য করতে পারছি না।

.

আমার শুধু কান্নায় পাচ্ছে।

কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি।

.

ছোট সাহেবের ফ্রেন্ডসরা চলে এসেছে।

সবগুলো ফ্রেন্ডস একসাথে জড়িয়ে ধরল।

ছোট সাহেবকে উনারা বলতে লাগলেন,,

.

-- কি রে প্রান্তিক কেমন আছিস??

.

-- ভালোই আছিরে।

তোরা কেমন আছিস সেটা তো আগে বল??

.

-- আমরাও ভালো আছিরে।

.

-- খাবার আনবি বলেছিস তাই বলে এত নিয়ে এসেছিস।

এত খাবে কে??

.

-- আমরাই খাব।

.

-- আমরা এত খাই নাকি রে।

তবে ভালোই করেছিস ছোঁয়া তো রয়েই গেছে।

মম ড্যাড রেখে গিয়েছে আমার দেখাশুনার জন্য।

আমি নিশ্চিত ও নিজের জন্য রান্না মোটেও করবে না।

ওই খেয়ে নিবে।

.

-- আগে বল এইগুলো এখন কোথায় রাখব??

.

-- এইগুলো তো বেড়ে রাখতে হবে।

দাঁড়া।

ছোঁয়াকে ডাক দিচ্ছি।

.

-- এই প্রান্তিক।

এই ছোঁয়াটা আবার কে রে??

.

-- আমাদের বাড়িতে আগে আন্টি কাজ করত না তার একটা মাত্র।

ওই আন্টি মারা যাওয়ার পর থেকে ও এইখানে থাকে।

বলতে গেলে মম ড্যাডই ও কে রেখে দিয়েছে।

মম ড্যাড অবশ্য ওকে পড়াশুনাও করাচ্ছে।

.

-- দে তাড়াতাড়ি ডাক দে ওকে।

.

-- হুম দিচ্ছি।

.

.

.

ঘুম থেকে উঠে দেখি আট টা বেজে গেছে।

আরে আমি এতখন আমি ঘুমিয়েছি।

আমাকে তো ছোট সাহেবের জন্য রান্না করতে হবে।

.

আরে আমি এত টেনশন করছি কেন??

উনি তো বলেই দিয়েছেন আজকে রান্না না করতে।

উনার ফ্রেন্ডসরা খাবার নিয়ে আসবেন।

.

ছোট সাহেব আমাকে ডাকছে,,,,

.

-- ওই ছোঁয়া।

তাড়াতাড়ি বাইরে চলে আস।

.

উনি এখন কেন আমাকে ডাকছেন??

উনি তো বলে দিয়েছেন উনার সামনে না যেতে।

তাহলে এখন কেন আমাকে প্রয়োজন পড়ছে।

.

আমি যাব না উনার কাছে।

.

-- কিরে আসছে না কেন??

দাঁড়া তোর এখনি মজা দেখাচ্ছি ফা*জিল মেয়ে একটা।

.

ছোট সাহেব নিজেই আমার ঘরে আসলেন।

আমি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।

উনি বলতে লাগলেন,,,

.

-- তোকে না সেই কখন থেকে ডাকছি।

তুই কোন রেসপন্স দিচ্ছিস না কেন??

.

-- আপনিই তো বললেন আমাকে আপনার সামনে না যেতে।

.

-- আসলেই তুই,,,

.

আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন।

আমি উনাকে বলছি,,

.

-- ছাড়ুন আমাকে বলছি।

কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ছাড়ুন।

.

আমাকে টানতে টানতে উনার ফ্রেন্ডসদের সামনে নিয়ে গেলেন।

আমাকে বলতে লাগলেন,,,

.

-- যা এইগুলো বেড়ে দে।

.

-- দিচ্ছি ছোট সাহেব।

.

উনারা ফ্রেন্ডসরা উনাকে বলছে,,,

.

-- এই কি ছোঁয়া??

.

-- হুম।

.

-- কত সুন্দর রে।

.

-- এই নজর দিবি না।

সামলে থাকবি।

ছোঁয়া কিন্তু এই পরিবারের খুব আদরের।

কোন উল্টা পাল্টা কিছু করলে খবর আছে ছেড়ে কথা বলবে না কিন্তু।

.

-- তার মানে তোরও খুব আদরের তাই না প্রান্তিক।

তুইও খুব আদর করিস তাই না।

.

-- না আমার আদরের না।

আমি তো ওকে দেখতেই পারি না।

সহ্যই করতে পারি না।

.

-- আমার তো তোর কথাই বিশ্বাস হচ্ছে না।

তোর মত একটা ছেলে এমন একটা সুন্দরি মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছে সেটাই তো বিশ্বাস করতে পারছি না।

আর কাকে কি বলছি?

তোর যা পছন্দ দেখলে মনে হয় কি একেকটা হি"জরা।

ঘরেই সুন্দরি মেয়ে থাকতে আর উনি বাইরে খুজছেন।

.

-- এই তোরা ফালতু আলাপ এইবার বন্ধ করবি।

আজকের মজাটা মাটি করে দিস না।

ওই তো ছোঁয়া এসেছে বেড়ে নিয়ে।

চল খেয়ে দেয়ে মজা করা শুরু করি।

.

-- হুম চল।

.

.

.

আমি খাবার বেড়ে নিয়ে চলে আসলাম।

তারপর উনাদের খাবার খেতে দিলাম।

যখনই সবাই খাবার মুখে দিল একসাথে সবাই খাবার ফেলে দিল।

.

ছোট সাহেব বলতে লাগলেন,,

.

-- ওই ফাজিল তুই কি খাবার নিয়ে এসেছিস??

খাওয়াটাই আর আজকের মজাটাই মাটি করে দিলেন।

.

-- আগে তো কোনদিন এমন হয়নি।

আজকে হঠাৎ এমন হল কেন??

.

-- দ্যাত ভালো লাগে না।

না খেয়ে থাকতে হবে।

দ্যাত কিসের জন্য যে ছোঁয়াকে মানা করলাম রান্না করতে।

.

আমি ছোট সাহেব আর তার বন্ধুদেরকে বলতে লাগলাম,,

.

-- আপনারা চিন্তা করবেন না আমি এখনি রান্না করে নিয়ে আসছি।

বেশি সময় লাগবে না।

.

-- হ্যা ঠিক আছে যা।

.

আমি উনাদের জন্য রান্না করতে চলে গেলাম।

ভাবছি যে কি রান্না করা যায়।

আর কিছু না ভেবে বিরিয়ানি রান্না শুরু করে দিলাম।

.

আর এমনিতে ছোট সাহেব তো বিরিয়ানি খেতে বেশি পছন্দ করে।

আমি বিরিয়ানি রান্না শুরু করে দিলাম।

.

.

.

ছোট সাহেবের বন্ধুরা উনাকে বলছে,,

.

-- তোর কি মনে হয় এখন ছোঁয়া কি রান্না করে নিয়ে আসতে পারে??

.

-- জানি না রে।

তবে ও যদি বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে আসে রে।

সেই মজা হবে।

আমি একদম তৃপ্তি সহকারে খাব।

প্রচুর খিদা পাচ্ছে।

.

-- এমন ভাব দেখাচ্ছিস যে শুধু তোরই ক্ষুধা লেগেছে।

আমাদের যেন লাগেনি।

.

-- আরে আমি তো সবার কথায় বললাম।

আমি তো নিজের কথা বলেনি শুধু।

.

-- জানি তুই কত ভাবিস আমাদেরকে নিয়ে।

.

-- এই তোরা এখন এই টপিক্স বাদ দে।

আরে ছোঁয়া তাড়াতাড়ি কর না।

.

-- আরে তুই যেয়ে একটু হেল্প কর তোর সুন্দরি গার্লফ্রেন্ডকে যেয়ে।(মজা করে)

.

-- কি?

আমার,,,

তোরা কিন্তু একটু বেশিই বুঝছিস।

ওর সাথে আমার কোন রিলেশন নেই।

ও শুধু আমাদের বাড়িতে থাকে কাজ করে।

আমি তো ওকে দেখতেই পারি না।

.

-- তুই যতই যাই বলিস তুই যে ওর সাথে যে করিস সেটা আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি প্রান্তিক।

.

-- এই তোরা এখন চুপ করবি।

এইসব ফালতু কথা আমার সামনে বলবি না।

.

-- তোর ভাবসাব বলেই দিচ্ছে তুই করিস।

.

-- চুপ কর না রে তোরা।

.

.

.

আমি বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে উনাদের কাছে নিয়ে গেল।

আমি উনাদের সামনে যেয়ে বললাম,,

.

-- হয়ে গেছে।

.

সবাই ক্ষুধার জ্বালাই খাবার টেবিলে এসে বসল।

আমি সবাইকে খাবার বেড়ে দিলাম।

এতটাই ক্ষুধা পেয়েছে যে সাথে সাথে বিরিয়ানি মুখে দিল।

.

সবাই বলতে লাগল,,অনেক টেস্টি হয়েছে।

ছোট সাহেবের একজন বন্ধু বলে উঠল,,,,

.

-- কি রে প্রান্তিক তৃপ্তি করে খাচ্ছিস তো??

তুই তো বিরিয়ানির কথাই ভাবছিলি।

.

-- হুম।

.

-- আচ্ছা ছোঁয়া তুমি কি করে বুঝলে প্রান্তিকের এখন বিরিয়ানি খেতে মন চেয়েছে??

.

-- কারন উনি বিরিয়ানি খুব পছন্দ করেন।

আর কোন পার্টিই হোক না কেন উনি বিরিয়ানিই খান এর জন্য আর কি।

.

-- ও আচ্ছা।

আর বিরিয়ানিটা অনেক টেস্ট হয়েছে।

এত টেস্ট আগে কোনদিন পাইনি।

.

-- ধন্যবাদ।

.

-- তোমার বয়স কত??

.

-- এইতো ১৮ পড়বে এইবার।

.

-- ভালোই।

.

.

.

উনারা কথা বলা বাদ দিয়ে খাবার খেয়ে নিলেন।

যার যা প্রয়োজন আমি তা তুলে তুলে দিচ্ছি।

সবারই খাওয়া শেষ।

.

সবাই হাত ধুয়ে আসল।

ছোট সাহেব সবাইকে বলছেন,,,,

.

-- চল শুরু করি পার্টি।

.

-- yeah let's go..

.

-- play the music...

.

Abhi to party soro hoyia...

এই গান বাজাচ্ছে।

সবাই নাচা শুরু করল।

.

.

.

আমি তো শুধু ছোট সাহেবের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।

জানি না কিসের টানে উনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

উনার দেওয়া সব কষ্ট সহ্য করে নিয়।

.

তেমন কষ্টই হয় না আমার।

উনার নাচকেই বারবার শুধু দেখছি।

একসময় উনি আমার দিকে তাকালেন।

.

আমি ওইখান থেকে চলে যেয়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম।

উনার বন্ধু উনাকে বলছেন,,,,

.

-- কি রে ছোঁয়া ভিতরে চলে গেল।

তুই আটকালি না কেন??

.

-- ওর হয়ত বা এইসব ভালো লাগছে না তাই চলে গেছে।

আমি ওকে কি আটকাব।

.

-- আরে মেয়েটা কিছুই খায়নি।

না খেয়ে শুয়ে পড়বে নাকি।

.

-- কি??


ছোট সাহেবের অত্যাচার

Part:01

Previous Post Next Post

Contact Form