গল্পঃ বহুরূপী_প্রেম (প্রথম পর্ব )

 



বাথরুমে গোসল করছে তুষি, ভুলবশত ভেতর থেকে দরজা লক করা হয়নি। রিল্যাক্স মুডে শরীরে সাবান মাখছে এমন সময় হুড়মুড় করে কে একজন দরজা ঠেলে বাথরুমের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়লো। 


বিদ্যুৎ গতিতে কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে যে পড়েছে তাকে টেনে তুলে দেখলো একটা ছেলে, দুই গালের ওপর ঠাস্ ঠাস্ দুটো চ,ড় মে,রে বললো– হতচ্ছাড়া পড়ার আর যায়গা নেই দুনিয়ায়, মারার জন্য আমার গোসলখানা খুঁজে পাইছো। 


ছেলেটার এমনিতেই লেজেগোবরে অবস্থা তার ওপর তুষির ডাইরেক্ট একশন। কি করবে কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা।


তুষি আবার ধম,ক দিয়ে বললো– এই উজবুক এখানে কি তোর?


ছেলেটা কনিষ্ঠা আঙ্গুলটি দেখিয়ে বোঝাতে চাইলো প্রস্রাব করতে এসেছিল।


তুষি ভেতর থেকে দরজা চেপে লাগিয়েছিল কিন্তু ছিটকিনি লাগায়নি। ছেলেটার নিম্নচাপ প্রবল ছিল বলে তারাহুরো করে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলেই হিমিকে দেখে হতভম্ব হয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে গেল। এই হলো মূল ঘটনা।


তুষি চোখ লাল করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো– এমন যায়গায় কিক মেরে দিবো জীবনে আর হিসু করার দরকার হবেনা, সোজা স্বর্গে চলে যাবি একেবারে। 


তুষির হাবভাব দেখে ছেলেটা সময় থাকতে সটকে পড়লো।


তুষি নির্ভীক মনোভাবের চঞ্চল বুদ্ধিমতী মেয়ে, সোজাসাপটা কথায় ও বুদ্ধি বিচক্ষণতায় পরিবারের সবার কাছে খুব আদরের আর স্নেহের।


যা-ই হোক উপরে ঘটনা ছিল দশ বছর আগের, যখন তুষির বয়স ছিল দশ বছর, আর সেই ছেলেটা মানে অভির বয়স ছিল ষোলো।


এখনও তুষি তেমনই আছে কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখতে শতগুণ বেশী রূপবতী হয়েছে। তুষির দিকে তাকালে চোখ ফেরানো দায়। রূপে গুণে তার তুলনা সে নিজে।


অভিও দেখতে সুদর্শন প্রানবন্ত লম্বাচওড়া তরুণ। কিন্তু সেই ঘটনার পরে থেকে আজ পর্যন্ত আর দেখা হয়নি দুজনের সাথে।


সেই দশ বছর আগে তুষিদের বাসায় অভিরা এসেছিল এই কারণে যে তুষি ও অভির বাবা খুব ভালো বন্ধু। তুষির বাবা শহরের নামকরা প্রথম সারির বিজনেসম্যান আর অভির বাবা সরকারি উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা। অভির বাবার অন্য কোথাও ট্রান্সফার হয়েছিল এবং সেখানে চলে যাবার আগে তুষির বাবা অভিদের দাওয়াত করেছিল তার বাসায়। তারপর ঘটেছিল সেই ঘটনা। 


দুজনেই হয়তো এখন ভুলে গেছে সে-সব।


সময়ের স্রোতে এতখানি ভেসে এসে অতীত আর কতটাই বা স্পষ্ট মনে থাকে! সবকিছু একসময় বাস্তবতার আড়ালে চাপা পড়ে যায়। 


অভির বাবার আবারও ট্রান্সফার হয়ে এই শহরে চলে এসেছে, অভিরা থাকে সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারে।


তুষিদের বাসা থেকে অফিসার্স কোয়ার্টার এক কিলোমিটারের কম হবে। বলতে গেলে কাছাকাছি।


অভির বাবা মা তুষিদের বাসায় দেখা করতে গেলেও অভির যাওয়া হয়নি তাই দশ বছর আগের সেই মেয়েটিকে নিয়ে তার কোনো স্মৃতি আর তাজা হয়নি। মা বাবা যাবার জন্য জোর করলেও অভি যাবার আগ্রহ দেখায়নি কারণ দশ বছর আগে বাবার বন্ধুর মেয়ে অতটা ভ,য়ঙ্কর ছিল, এখন নাজানি কতটা বেশি ভ,য়ঙ্কর!


বিজনেসম্যান বাবার একমাত্র মেয়ে বলে কলেজে অন্যরকম একটা পরিচিতি তুষির, ছোটখাটো একটা গ্যাঙ আছে তাদের নিয়ে নতুনদের একটু আধটু উত্যক্ত করে ক্যাম্পাসে।


সিনিয়ররা ক্রাশ খেয়ে চুপচাপ হজম করে নেয়, ভয়ে তুষির সামনে টুশব্দ করারও সাহস পায়না।

সবাই জানে তুষির সামনে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে গেলে মান ইজ্জতের চাটনি বানিয়ে পুরো কলেজে বিলিয়ে দেবে।


তুষি যতখানি সুন্দরী তারচে দ্বিগুণ ঠোঁটকাটা স্বভাবের। যা মুখে আসে অমনি বলে দেবে সামনে যে-ই থাকুক। এসবের জন্য সিনিয়ররা তুষির ব্যাপারে নাক গলাতে আসেনা।


ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল তুষি ওর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে, কি একটা প্রয়োজনে অভিও কলেজের গেট পেরিয়ে ভেতরে আসলো। 


তুষির বন্ধু বান্ধবীদের চোখ পড়লো অভির ওপর। 


ফুলহাতা চেক শার্ট গায়ে, হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা। হাতে কালো ঘড়ি, পরনে জিন্স প্যান্ট, পায়ে কনভার্টস চোখে কালো সানগ্লাস। ফর্সা গায়ের রঙ তার ওপর প্রায় ছ'ফুট লম্বা, পোশাকআশাকে আরও আকর্ষণীয় লাগছে অভিকে।


সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে অভির দিকে। 


তুষির একটা বান্ধবী লিজা, নিজেকে আর সামলাতে না পেরে অভিকে উদ্দেশ্য করে বললো– ও হিরো, তুমি মনেহয় এফডিসি ভেবে ভুল করে কলেজে ঢুকে পড়েছো।


অভি ঘুরে দাড়িয়ে চোখের সানগ্লাস খুলে লিজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।


অভির হাসি দেখে লিজার ভিরমি খাবার উপক্রম।


এসব দেখে তুষির গা জ্বলে যাচ্ছে। দাঁত কটমট করে লিজাকে বললো– ছেলে দেখলে আর সহ্য হয়না তাইনা? একেবারে গলে পড়তে হবে। 


লিজা ফিসফিস করে বললো– এ তো ছেলে নয়রে, রাস্তা ভুল করে কলেজে ঢুকে পড়া বাংলা সিনেমার হিরো। 


তুষি বললো– তাই না? দাঁড়া দেখ তোর হিরোকে কীভাবে জিরো করি।


অভি দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে কারো জন্য হয়তো। মোবাইল বের করে কাউকে কল দিচ্ছে হয়তো কিন্তু সংযোগ পাচ্ছেনা।


তুষি ওর বন্ধু রবিনের সানগ্লাসটি এনে চোখে পড়ে পায়ের ওপর পা তুলে তুড়ি বাজাতেই অভি তুষির দিকে তাকালো।


তুষি হাতের ইশারায় অভিকে ডাকতেই অভি এসে সামনে দাড়ালো।


তুষির পেছনে ওর বন্ধু বান্ধবীরা তুষিকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।


একটু ভাব নিয়ে তুষি বললো– নাম কি? 


তুষির এরকম আচরণ অভির ভালো লাগলোনা তাই সবার ওপর নজর বুলিয়ে তুষির প্রশ্নের বাঁকা জবাব দিলো অভি– নাম জেনে কি হবে, আমার নামে রেশন কার্ড দিবে নাকি?


অভির কথায় তুষির বন্ধু বান্ধবীরা হেসে উঠতেই তুষির চোখ রাঙ্গানিতে আবার সবাই চুপ হয়ে গেল।


তুষি বললো– নতুন নাকি? 


অভি বললো– হ্যা। 


– যাও দশ টাকার বাদাম নিয়ে আসো আমার জন্য – বলে পার্সব্যাগ থেকে দশ টাকার একটা নোট বের করে অভির দিকে বাড়িয়ে ধরলো তুষি।


অভি নুয়ে তুষির পা দেখতে লাগলো। তুষি অবাক হয়ে বললো– কি হলো কি দেখছো?


অভি বললো– না দেখলাম তোমার পা তো ঠিক আছে, ল্যাংড়া খোড়া হলে নাহয় দয়া করে এনে দিতাম। 


এবার তুষির মেজাজটা গরম হয়ে উঠলো, এই প্রথম কেউ এভাবে তুষির সাথে পা,ঙ্গা নিচ্ছে। তুষি কটমট করে বললো– এই যে বেশি সেয়ানাগিরী দেখিয়োনা, এখানে সবাই আমার কথায় চলে। 


অভি বললো– আচ্ছা তোমার বাবার নামটা কি বলোতো, অথবা তোমার বাসার এড্রেস? 


তুষি অবাক হয়ে বললো– মানে? 


অভি বললো– না মানে মিলিয়ে দেখতাম আগেপিছে তোমাদের বাসায় তোমার বাবার খাবার কোনদিন খেয়েছি কিনা।


তুষি আরও অবাক হয়ে বললো– মানে? 


– মানে হলো যারা তোমার কথায় চলে তারা হয়তো তোমার বাবার খায়, নয়তো ব্যক্তিত্বহীন। আমি আমার বাবার খাই এবং নিজের মর্জিতে চলি বুঝলে?


অভির কথা শুনে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।


অভি মুচকি হেসে তুষিকে বললো– এই যে ম্যাডাম ঝাল মরিচ, মা বাবা নিশ্চয়ই সুন্দর একটা নাম রেখেছে, তো নামটা কি জানতে পারি?


তুমি বললো– তুষি।


অভি বললো– তো মিস তুষি, আপনার যায়গায় কোনো ছেলে হলে এতক্ষণে নাক বরাবর মেরে দিতাম ঘু,ষি। 


অভির কথায় আবারও তুষির বন্ধু বান্ধবীরা হো হো করে হেসে উঠলো। 


সবার সামনে নিজের প্রেস্টিজ পাংচার হতে দেখে তুষির মগজে আগুন ধরে গেল। উঠে দাড়িয়ে অভির শার্টের কলার ধরে বললো– এত এটিটিউড, আমার সাথে পাঙ্গা নেবার মজা তো ভোগ করতেই হবে। এখান থেকে সোজা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।


অভির শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে রাগে ফসফস করতে করতে তুষি রবিনকে বললো– রবিন পোলাপান নিয়ে ওর ঠ্যাং ভে,ঙে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা কর...


চলবে...


গল্পঃ বহুরূপী_প্রেম ( প্রথম পর্ব ) 

Previous Post Next Post

Contact Form