রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আদনান। তখনই মেয়েলি কণ্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালো। মেয়েটা তাকানো দেখে আবার বলল, স্যার যাবেন? আমার বাবা খুব অসুস্থ আমার অনেক টাকার প্রয়োজন।
আদনান নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলল,
-- আমাকে দেখে কি মনে হয় তোমার?
-- স্যার বিশ্বাস করুন আমি আজ প্রথম এসেছি। আর আপনি হবেন আমার প্রথম কাস্টমার।
-- আমার সামনে থেকে যাও। এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে।
আদনান মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে। কিছুক্ষণ আগে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়াতে গাড়ি সেখানেই রেখে পায়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে আদনান। আর রাস্তায় এই মেয়ের সাথে দেখা। আদনান নিজ গতিতে হেঁটে যাচ্ছে সে খেয়াল করিনি মেয়েটা যে এখনও তার পিছনে পড়ে আছে।হঠাৎ করে একটা শব্দ বেশে আসে আদনানের কানে। সাথে সাথে পিছনে ঘুরতেই সে দেখতে পায় কয়েকটি ছেলে মিলে মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। আর মেয়েটাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া করছে। আদনান এবার এগিয়ে যেতেই ছেলে গুলো দৌড়ে পালিয়ে যায়।
-- ধন্যবাদ স্যার।
-- ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু হয়নি। বাসায় চলে যাও রাত অনেক হয়েছে।
-- কিন্তু!
-- কিন্তু কি?
-- আমার বাবার চিকিৎসার টাকা না নিয়ে গেলে তো আমার বাবার চিকিৎসা হবে না। আমার বাবা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার আর কেউ নেই।
এই কথা বলে মেয়েটা কান্না করতে শুরু করে। আদনান এবার মেয়েটার দিকে ভালো ভাবে তাকায়। মেয়েটার মুখে হিজাব থাকায় মুখ দেখা যাচ্ছেনা। পড়নে কালো বোরখা।
-- কোন হাসপাতালে আছে তোমার বাবা?
মেয়েটা হাসপাতালের নাম বলল। হাসপাতালের নাম শুনে আদনান একটা রহস্যময় হাসি দিলেন। আর বলল -- কতো নাম্বার কেবিনে আছে তোমার বাবা?
-- তিনশো দশ নাম্বার কেবিন।
-- ঠিক আছে তুমি এখন বাসায় চলে যাও। আর টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তোমার বাবার চিকিৎসা হবে।
-- কীভাবে হবে?
-- এতো কিছু তোমার না জানলেও চলবে। তুমি এখন বাসায় যাও।
-- এতো রাতে আমি একা কীভাবে বাসায় যাবো?
আদনান দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল -- একা বের হতে পারছ আর এখন যেতে পারবেনা? আজব মেয়ে তো!
মেয়েটা মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে শুরু করে। মেয়েদের কান্না আদনানের অসহ্য লাগে। তাই আদনান একটা ধমক দিয়ে মেয়েটাকে থামিয়ে দেয়। আদনানের ধমকে মেয়েটা কেঁপে ওঠে।
-- আজাইরা কান্নাকাটি করতে হবে না। তোমার বাসা কোথায়?
মেয়েটা নিজের ঠিকানা বলল।
-- ঠিক আছে আমার বাসাও ঐদিকে।
এবার দু'জনে হাঁটতে শুরু করে। দু'জনেই নিশ্চুপ। নিরবতা ভাঙে মেয়েটা বলল -- স্যার আমার নাম আদিবা রহমান।
এই কথা বলে আদিবা আদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আদনান মেয়েটার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়। আদনানের চোখ দেখে আদিবা একটা ঢোঁক গেলে। আর সে নিজের হাত নামিয়ে মনে মনে আদনানের চোদ্দগুষ্টিকে উদ্ধার করতে থাকে।
-- ও স্যার আপনার নাম তো বললেন না!
-- তোমার বাসা চলে আসছে, তুমি এখন বাসায় যাও।
-- কিন্তু আপনার নামটা?
-- আর কোনো কথা নই। বাসায় যাও। আর একটা কথা! আজ যে ভুল পথে পা বাড়ালে নেক্সট টাইম কখনো এসব চিন্তা ও মাথায় আনবেনা।
-- ঠিক আছে, আপনার নাম?
-- গুড নাইট।
এই কথা বলে আদনান চলে গেলো। আর আদিবা মনে মনে বলছে, গুড নাইট আবার কারোর নাম হয় নাকি? তাতে আমার কি? হলেও হতে পারে। তবে নামটা সুন্দর আছে 'গুড নাইট' হিহিহি।
এদিকে আদনান কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের বাসায় পৌছে যায়। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আদনানের আম্মু এসে দরজা খুলে দেয়। পায়ে হেঁটে আসার কারণে আদনানের পুরো শ'রীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।
-- কিরে তোর এই অবস্থা কীভাবে হলো?
-- রাস্তায় হঠাৎ করে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। তাই পায়ে হেঁটে আসছি।
-- গ্যাস চেক করিস নি?
-- না। এখন এতো কথা বলতে পারবোনা। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি খাবার রেডি করে রেখো।
আদনানের আম্মুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে কাওকে ফোন দেয়। ফোনে কথা বলে সে খাবার খাওয়ার জন্য আসে। আদনানের আম্মু রানী বেগম খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। আদনান আসতেই বলল,
-- এতক্ষণ লাগে?
-- একটু ফোনে কথা বলছিলাম।
-- এভাবে আমি আর একা কতো কাজ করব? এবার তো একটা বিয়ে কর। আমার ও কথা বলার একটা মানুষ হবে।
-- আবার শুরু করলে? বলছিনা আমার সময় হলে আমি অবশ্যই বলব।
-- পড়াশোনা তো অনেক আগেই শেষ করলি। আর তুই তো বেকার না।
-- শোনো আম্মু আমি মনের মতো যেদিন কাওকে পাবো সেদিন সবার আগে তোমাকে বলব। এখন এসব নিয়ে কথা বলবেনা।
-- ঠিক আছে এখন খাবার খেয়ে নে। আমাকে ঘুমাতে হবে।
আদনান এবার খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে আদিবা। আর সে তার অসুস্থ বাবার জন্য রান্না করতে শুরু করে। রান্নাবান্না শেষ করে খাবার গুলো নিয়ে হাসপাতালের দিকে চলে যেতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা হাসপাতালে পৌছে যায়। আর সে বাবার কেবিনে গিয়ে দেখে কেবিন ফাঁকা হয়ে আছে। আদিবা বাবাকে কেবিনে দেখতে না পেয়ে সে ঘাবড়ে যায়। আর তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের কাছে চলে গেল।
-- ডাক্তার আমার বাবা কেবিনে নেই কেন? আমার বাবাকে কি করছেন আপনারা? আমার বাবা কোথায়? (কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছে আদিবা)
-- কান্না করছেন কেন? ভয় পাবেন না আপনার বাবা ঠিক আছে।
-- কোথায় আমার বাবা? আমার বাবাকে আমার কাছে এনে দেন।
ডাক্তার উঠে আদিবার কাছে আসতেই আদিবা ডাক্তারের পা ধরে বলে -- ডাক্তার প্লিজ আমাকে কিছু সময় দেন। আমি টাকার ব্যবস্থা করব। তাও আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন। আমার বাবা ছাড়া আমার আর কেউ নেই।
-- কি করছ তুমি এসব। তোমার বাবার কাল রাতেই অপারেশন হয়েছে। উনি এখন সুস্থ আছে।
আদিবা কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,
-- মানে? আমি তো এখনও টাকা দিতে পারিনি। তাহলে অপারেশন কীভাবে হলো?
-- আমাদের বড় স্যার সব কিছুর ব্যবস্থা করছে।
-- আমার বাবা এখন কোথায় আছে?
-- কিছুক্ষণ পরে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হবে তখন দেখবে। আর চিন্তার কোনো কারণ নেই।
-- আচ্ছা আপনাদের স্যার কোথায় ওনার সাথে কি দেখা করা যাবে?
-- উনি এতো তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসেন না।
-- কখন আসবেন?
-- দশটার দিকে।
কিছুক্ষণ পরে আদিবার বাবাকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়। আদিবা গিয়ে তার বাবার পাশে বসতেই উনি চোখে মেলে তাকান।
-- বাবা তোমার আর কষ্ট হবেনা। তুমি এবার খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
-- তুই আমার জন্য অনেক কষ্ট করছিস। আমি তো ভাবতেও পারিনি আবার তোর সাথে কথা বলতে পারবো। আমি ভাবছিলাম আমিও বুঝি তোকে একা করে দিয়ে চলে যাবো।
-- এসব কথা বলতে নেই বাবা। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো?
-- তুই এতো টাকা কোথায় পেয়েছিস?
-- আমি তো কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য। সব করছে একটা অচেনা মানুষ।
-- কে সে?
-- আমিও জানিনা। ডাক্তার বলল এই হাসপাতালে বড় স্যার।
-- ওহ।
তাদের কথা বলার মাঝে একজন নার্স এসে আদিবাকে বলল -- আপনাকে বড় স্যার ডাকছেন। ওনার সাথে দেখা করুন।
বড় স্যারের কথা শুনে আদিবা তাড়াতাড়ি চলে যায় বড় স্যারের কেবিনে। আদিবা কেবিনের সামনে গিয়ে দেখে গতকাল রাতের সেই লোক।
আদিবা ভিতরে যেতে যেতে বলল -- আরে গুড নাইট স্যার আপনি?
কথাটা শুনে এবার আদনান তাকিয়ে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা পরির মতো মেয়ে। মায়াবী চেহারা। আদনান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল। আদিবা আদনানের কাছে গিয়ে বলল -- গুড নাইট স্যার আপনি এখানে?
আদনান আদিবার কথা শুনে বলল -- কে আপনি?
-- আরে স্যার আমি আদিবা। কাল রাতে পরিচয় হয়ে ছিল। আমাকে চিনতে পারছেন না গুড নাইট স্যার?
আদিবার কথা শুনে আদনান পাশে তাকিয়ে দেখে নার্স দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আদনান নার্সকে ধমক দিয়ে বলল -- এখানে দাঁড়িয়ে হাসার কি আছে? নিজের কাজে যান।
নার্স আদনানের রাগী মুখ দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। আদনানের রাগি মুখ দেখে আদিবাও একটু ভয় পায়। আদনান নিজের চেয়ার থেকে উঠে আদিবার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আর আদিবা ভয়ে পিছনে যেতে থাকে।
চলবে?
#এক_মুঠো_রোদ্দুর
(সূচনা পর্ব)
নেক্সট পার্টগুলো সবার আগে গ্রুপে দেওয়া হবে।।